একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ,  আমরা যা দেখি ও করণীয়।

নয়ন তানবীরুল বারী

0
1404

একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ,  আমরা যা দেখি ও করণীয়।

– নয়ন তানবীরুল বারী।

একজন ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধি হলো একটা কোম্পানির চাকুরীজীবী।  প্রফেশনালি তিনি কোম্পানির পণ্য সম্বন্ধে ডাক্তারগণকে অবহিত করেন। ঔষধের কোয়ালিটির পাশাপাশি ঔষধটি সম্বন্ধে ডাক্টারগণকে বিশদ জানান। একজন প্রতিনিধিকে সহায়তা করার জন্য আছেন এসআর যিনি আপনার বাসার পাশের ফার্মেসিতে বা আপনার হাতে ঔষধটি পৌঁছে দেন বিনামূল্যে তথা কোম্পানির খরচে। একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পৃথিবীতে আগত নতুন রোগের, নতুন ঔষধ সম্পর্কে ডাক্তারগণকে জানান। একটি কোম্পানিতে দেশসেরা ফার্মাসিস্টগণ চাকরি করেন। যাদেরকে প্রোডাক্ট ম্যানেজার বলা হয়। একটি ঔষধের এ টু জেট সম্বন্ধে তিনি অভিজ্ঞ। দেশি-বিদেশি ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির খবরাখবর তাকে রাখতে হয়। একজন ফার্মাসিস্ট যা জানেন অনেক সময় ডাক্তাররাও তা জানেননা। কাউকে ছোট করার জন্য বলা নয় এটা। আসলে দুজনের কাজটা ভিন্ন। ডাক্তার রোগীকে সেবা দেন সারাদিন। রোগ, রোগী আর চিকিৎসা নিয়েই ডাক্তাররা বিজি থাকেন। একজন ফার্মাসিস্ট আর একজন ডাক্তারের পড়ালেখার বিষয়আশয়ও এক নয়। এখানে একটা পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। ডাক্তারগণ নিজের জ্ঞান, আরো নানা উৎস,  কোম্পানির সরবরাহকৃত তথ্য যাচাইবাছাই করে তবেই প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখেন।
একটা কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের মাধ্যমে ডাক্তারদের সাথে দেশে বিদেশে নানা সাইন্টিফিক সেমিনার করেন। মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক উন্নয়ন থেকে রোগীর উন্নত চিকিৎসার পেছনে একটি ঔষধ কোম্পানির অবদান রয়েছে।
পড়ালেখার দিক হতে একজন ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, একজন উকিল, একজন জেলা প্রশাসক, একজন জজ, একজন ইঞ্জিনিয়ার,  একজন ম্যাজিস্ট্রেট সমমানের তথা সকলেই স্নাতক পর্যায়ের।

একটা সমাজ চলতে হলে নানা পেশার মানুষ লাগে। সকলে হাফেজ হলে, সকলে ডাক্তার হলে, সকলে প্রশাসক হলে তো দেশ চলবে না।
জুতা ছিঁড়ে গেলে মুচির কাছেই যেতে হবে। চুল কাটাতে হলে নাপিতের কাছেই যেতে হবে। এমনকি টয়লেট ভর্তি হলে মেথরের কাছেই যেতে হবে। একজনের কাজ আরেকজন করে দিতে অক্ষম। অর্থাৎ মর্যাদা, প্রয়োজনীয়তা ও পেশাগত দিক হতে কেউ কারও চেয়ে ছোট কিংবা বড় নন।
আর মেধা একমাত্র অহংকারের কিছু নয়। মেধাবী লোক সৎ, অসৎ দুই হতে পারে। মনে রাখতে হবে শয়তান কিন্তু কম মেধাবী নয়।
তাই বলে এটাও সব সময় সত্য নয় যে কম মেধাবী মানুষ মাত্রই সৎ। গরীব মাত্রই সৎ।

আবার মূল বিষয়ে আসি।
একজন এম.আর তথা মেডিকেল প্রতিনিধিকে আমরা মনে করি এরা কোম্পানির দালাল, এরা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে, এরা ডাক্তারের চেম্বারে ডিস্টার্ব করে, ডাক্তারকে প্রভাবিত করে ইত্যাদি।
কিন্তু একজন প্রতিনিধিকে সকাল হতে রাত পর্যন্ত কোম্পানির টার্গেট পূরনে কাজ করে যেতে হয় নিরবিচ্ছিন্নভাবে।
স্নাতক, স্নাতকোত্তর পাশ করে একজন ছেলে কিংবা মেয়ে ঔষধ কোম্পানিতে কাজ করে খাচ্ছে। এতে বেকারত্ব দূরও হচ্ছে।
একজন মেডিকেল প্রতিনিধি একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে একটা চিকিৎসা ব্যবস্থার অংশ। একটা হাসপাতালে কাজ করে ডাক্তার, নার্স, আয়া, এইচআর, একাউন্টস বেতন নেন। কিন্ত মেডিকেল প্রতিনিধি এর অংশ হয়েও যেন হাসপাতালের কেউ নন। উপরন্তু মাঝে মাঝে সাংবাদিকগণ এদেরকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে গ্লানির শেষ থাকে না। মনে রাখতে হবে তাদের পরিবার আছে, সমাজ আছে, ছেলেমেয়ে আছে। এখন পাল্টা প্রশ্ন যদি করা হয় ভালো কে? সাংবাদিক? উকিল? ইঞ্জিনিয়ার?  রাজনীতিবিদ?
একজন প্রতিনিধি চিকিৎসা ব্যবস্থার এ টু জেট সম্পর্কে জানেন। তিনি পরিবারে ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন কখনো কখনো জরুরী প্রয়োজনে।
একজন এম.আর এর সহায়তায় আমরা ভালো ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে পারি। একজন এম.আর এর সহায়তা যদি প্রথমেই নেই তাহলে হাসপাতালে টেস্টে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পেতে পারি। এমনকি আইসিইউতেও ডিসকাউন্ট পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন হাসপাতালেরও মার্কেটিং জনবল থাকে আপনি নিজে কিংবা মেডিকেল প্রতিনিধির সহায়তা নিয়ে হাসপাতালের উত্তম সেবা কম খরচে নিতে পারবেন। মেডিকেল প্রতিনিধির কাছে সরাসরি ঔষধ নিতে পারলে কোম্পানির মূল্যে ঔষধ পেতে পারেন। একজন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির সহায়তা নিয়ে এম্বুলেন্স সহায়তা পেতে পারেন কম খরচে। এম্বুলেন্স এরও সিন্ডিকেট থাকে অনেক সময় বুদ্ধিশুদ্ধি করে এই খরচের বড় একটা অংশ কমিয়ে আনতে পারেন। একটা কোম্পানির ঢাকাসহ সারাদেশে জনবল থাকে সেক্ষেত্রে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির সহায়তা নিয়ে সারাদেশে কানেক্ট হতে পারবেন।

এম.আর এর সহযোগিতায় অনেক বড় ডাক্তারের সিরিয়ালও অনেকে অনেক সময় নেন। তার পরিচিতির সুবাদে সহজে ডাক্তারকে দেখাতেও অনেক সময় সুবিধা পান রোগীর লোক। এমনকি তার পরিচিতির সূত্রে প্রাইভেটে দেখানোর সময় ডাক্তারের নির্ধারিত ফি অনেক সময় ডাক্তার কম রাখেন। ফার্মেসীতে পাইকারি রেটে দোকানদার ঔষধ দিয়ে দেন। ল্যাব টেস্টে কমিশন বা ছাড় পান অনেকেই আত্মীয় কিংবা বন্ধু, প্রতিবেশী পরিচয়ে। এই পরিচয়টা দেন ঐ মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভই সশরীরে উপস্থিত থেকে। নিজের ডিউটির ফাঁকে পরিচিতদের সময় দিতে হয় তাদের। দেনও মানবতার খাতিরে।

প্রতিনিধিরা রক্তদান কিংবা ম্যানেজও করে দিতে পারেন কেননা হাসপাতালের আশেপাশে তারা সুপরিচিত। রক্তপেতে রক্তবন্ধু গ্রপে পোস্ট করতে পারেন। একটি হাসপাতালের অলিগলি খুঁজতে কোম্পানির প্রতিনিধির সহযোগিতা পাবেন। নিরাপদ ও কম খরচে আবাসিক হোটেল ও খাবার দাবারের খবরাখবর পেতে পারেন। কোন ঔষধ কোন ফার্মেসিতে পাবেন তারও খোঁজ পাবেন। DIMS অ্যাপ হতে জেনেরিক মিলিয়ে ঔষধ মিলিয়ে নিতে পারেন তাদের সহযোগিতায়। ঔষধ খাবার নিয়মকানুন বা ডাক্তারের হাতের লেখা না বুঝলে তাও বুঝে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

 

Facebook Comments