ব্রার হুক খোলার সময় ছেলেটার হাত থরথর করে কাঁপছে। অনেকক্ষন ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু খুলতে পারছেনা। কি কারনে ছেলেটার হাত কাঁপছে বোঝা যাচ্ছেনা। হয়তো ছেলেটা কিছুটা ভীত এবং উত্তেজিত। ছেলেটার চোখ চকচক করছে। এক পর্যায়ে ছেলেটা বললোঃ
-আপু আমি খুলতে পারছিনা আপনি খুলে দিন।
খুশি ব্রা টা খুলে দিলো। কারের সিটটা হেলিয়ে দিয়ে ছেলেটা খুশির গলার কাছে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে শুরু করলো।
ছেলেটার কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম টিসু দিয়ে মুছে ফেললো, পানি খেয়ে বোতলটা খুশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
-আপু পানি খাবেন?
–না।
খুশির শরিরটা ঘিনঘিন করছে। ফার্মগেটের বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারটা ছেড়ে দিলো। ছেলেটার বয়স আর কতো হবে পনেরো কি ষোল। ছেলেটার কথা মনে পড়তেই খুশি দুহাত দিয়ে বারবার শরিরটা ঢলতে শুরু করলো। ছেলেটার মুখে আপু ডাক শুনতেই খুশির বুকটা ধক করে উঠেছিলো। এ বয়সের তার একটা ছোট ভাই আছে। ছেলেটা যতোবার তাকে আপু ডেকেছে ততোবার খুশির চোখের সামনে তার ভাইয়ের চেহারাটা ভেসে উঠেছে। কেন যেন অনেকদিন পরে নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে তার। এমনটা শুরুর দিকে হতো।
ধবধবে ফর্সা নাভির আশেপাশে অনেকগুলো কালোকালো দাগ। দাগগুলো দেখে ভয়ে শরীরের প্রত্যেকটি পোশম শিহরে উঠলো খুশির। দাগগুলো এখনো নতুন ঘা পুরোপুরি শুকায়নি এখনো।
গত সপ্তাহে এক ছেলে এসে দুজনের কথা বলে মেসে নিয়ে গিয়েছিলো। দুজনের কাজ শেষ হওয়ার পরে খুশি যখন উঠতে যাচ্ছিলো ঠিক তখন রুমে আরেকজন ঢুকলো বিশ্রী রকমের হাসি দিয়ে বললোঃ
-কিরে উঠছিস ক্যান, সিনেমা এখনো বাকি আছে শুয়ে পর।
খুশি কিছুটা ভীত হয়ে বললোঃ
–আমাকে তো দুজনের কথা বলছিলো।
-চুপ কর মাগি, একজন দুজন কি। যা বলছি কর। টাকা পাচ্ছিস দুজন হোক বা বিশজন হোক মজা দিবি টাকা নিবি নখরা করবিনা তো।
ব্যাথায় যখন খুশির শরীরটা কুঁকড়ে যাচ্ছিলো তখন ছেলেগুলো যেন আরো উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলো। খুশি ছেড়ে দেয়ার কথা বলতেই তার হাত পা বেঁধে মুখে রুমার গুঁজে দেয়া হলো। সারারাত পালাক্রমে ছেলেগুলো তাকে ভোগ করলো। ছেলেগুলোর আচরন দেখে মনে হচ্ছিলো নেশা করেছে। একজন হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকারত স্থানে ছ্যাঁকা দিচ্ছিলো। যন্ত্রনায় যখন খুশি ছটফট করছিলো তখন খুশিতে ছেলেটা কুৎসিত ভাবে হাসছিলো। শেষ রাতে হাতে তিন হাজার টাকা দিয়ে সিএনজিতে তুলে দিলো তাকে। সিএনজি থেকে নেমে দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছিলো তার। সিএনজিওয়ালা বুড়ে বললোঃ
-মা আমি আপনাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেই।
মা ডাকার পরে সাহায্য করার ছলে একটা মানুষ যে শরীরে এভাবে হাত বুলাতে পারে তা দেখে খুশি বেশ অবাক হয়েছিলো। খুশি এক ঝটকা দিয়ে লোকটার হাত সরিয়ে কোন মতে বাসা ফিরেছিলো। এক সপ্তাহ কাজে আসতে পারেনি সে। শরীরটা ভালো ছিলোনা।
আধঘন্টা গোসল সেরে টিশার্টটার উপরে বোরখাটা পড়ে নিলো খুশি। হিজাবটা পরার পরে শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। চোখে কাজল দিয়ে নিজেকে দেখে নিলো। ফুটওভার ব্রিজের পাশে দাঁড়ালো। তার টাকার দরকার এক সপ্তাহ কাজে আসতে পারেনি।
কালো রঙের একটা কার তার সামনে এসে থামলো। কারের দরজা খুলে দিয়ে হাতের ইশারায় তাকে ডাকলো।
গাড়ির ভেতরে রবীন্দ্রসংগীত বাঁজছে। তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম। কাচা-পাকা চুলের মধ্যবয়ষ্ক লোকটা ড্রাইভারের সিটে বসা। বিশ মিনিট হয়ে গেলো লোকটা চুপ করে আছে গাড়ি চলছে। গোসল করার কারনে গাড়ির আরামদায়ক সিটে ঘুম পাচ্ছে তার। ঘুম ভেঙ্গে দেখলো গাড়ি থেমে আছে। পাশের সিটের লোকটা নেই। গাড়িটা একটা বাসার সামনে থেমে আছে। গাড়ির দরজা খেলে বাইরে বের হলো খুশি। লোকটা বাড়ির দরজার সামনের সিঁড়িতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। খুশি এগিয়ে গিয়ে বললোঃ
-ডেকে দেননি কেন? শরীরটা একটু ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
–না আমার তেমন তাড়া নেই, আপনি বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকতে ইচ্ছা করলোনা।
লোকটার মুখে আপনি শুনে খুশি খানিকটা অবাক হলো। পতিতাদের কেউ আপনি ডাকেনা, তুই অথবা তুমি ডাকে। লোয়ার ক্লাসেররা ডাকে তুই আর ধনীরা ডাকে তুমি। আজ অবশ্য ওই কিশোর ছেলেটা আপনি ডেকেছে। ছেলেটার কথা মনে পড়তেই খুশির কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। খুশি হাত বাড়িয়ে লোকটার হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। ধনী কাস্টমাররা এই অভ্যাসগুলো পছন্দ করে। তারা খুশি হলে বকশিস টা ভালো পাওয়া যায়।
লোকটা বললোঃ
–আপনার নাম কি?
.
-মুন্নি।
–নকল নাম তাইনা?
খুশি কিছু বললোনা মুচকি হাসার চেষ্টা করলো। পতিতাদের নাম কেউ জানতে চায়না কারন তারা জানে পতিতারা আসল নাম বলেনা। নাম জানতে চাওয়ায় মুন্নির একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
তিন চার মাস আগে এক কাস্টমারের সাথে তার বাসা গিয়েছিলো। সোফায় বিশ মিনিট ধরে চুপচাপ পাশাপাশি বসে ছিলো। খুশি ভাবলো ছেলেটার হয়তো প্রথমবার। দেরি হচ্ছিলো দেখে নিজেই কথা বললোঃ
–আপনার বাসায় আর কেউ থাকেনা?
-না।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পরে ছেলেটা জিজ্ঞাসা করলোঃ
-আপনার নাম কি?
খুশি একটু হেসে জবাব দিলোঃ
–অবনি।
নামটা শুনে ছেলেটা অবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষন তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। খুশি মুখের নেকাবটা খুলার চেষ্টা করতেই ছেলেটা বাঁধা দিয়ে বললোঃ
-প্লিজ ওটা খুলবেন না। যেভাবে আছেন সেভাবেই বসে থাকুন। আপনাকে কিছু করতে হবেনা। আমি কিছু কথা বলবো, আপনি শুনবেন তারপর চলে যাবেন।
–টাকা?
-সেটা পাবেন সমস্যা নেই।
ছেলেটা সিগারেট ধরালো, কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে শুরু করলোঃ
-আপনার নাম শুনে অবাক হয়েছি কারন আমি যাকে ভালোবাসি তার নাম ও অবনি। আজ তার বিয়ে। আজ সে অন্য একটা পুরুষের সাথে রাত কাটাচ্ছে তাই আপনাকে নিয়ে এসেছি। এভাবে বললাম বলে মনে কষ্ট পাবেন না।
–আমরা মনে কষ্ট পাইনা।
-হাহাহা ভালো, খুব ভালো। আমি অবনিকে ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি। কিন্তু কি কারনে সে আমাকে ছেড়ে গেলো জানিনা। আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি সত্যি উত্তর দিবেন।
–জ্বী…
-মেয়েরা আসলে কি চায়?
–ভালোবাসা।
-হাহাহাহা……… হুম স্মার্ট আন্সার। আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন, এই নিন আপনার টাকা। আমিই আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসতাম কিন্তু অনেকগুলো ঘুমের অষুধ খেয়েছি তাই উঠতে পারছিনা। কিছু মনে করবেন না।
ছেলেটির পরে কি হয়েছিলো খুশি জানেনা কিন্তু সেই একমাত্র ছিলো যে এতোগুলো টাকা দেয়ার পরেও মুখটা পর্যন্ত দেখতে চায়নি। সেদিন অবনি মেয়েটার প্রতি খুশির খুব ঘৃণা হয়েছিলো। অবনিকে নিজের চেয়ে বড় পাপী মনে হচ্ছিলো।
খুশি সোফায় বসে আছে, তার পাশে বসে লোকটা গ্লাসে মদ ঢালছে। খুশির দিকে তাকিয়ে বললোঃ
-আপনি খান?
–জ্বী না অভ্যাস নেই, তবে আপনি বললে একটু খেতে পারি।
-না তার কোন প্রয়োজন নেই।
লোকটা এক চুমুকে গ্লাস শেষ করে উঠে দাঁড়ালো,
-আসুন আমার সাথে।
হালকা নীল আলো জ্বলছে রুমটাতে। লোকটা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে হঠাৎ পাশের রুম থেকে কাঁচের কিছু ভাঙ্গার শব্দ হলো। লোকটা তাড়াতাড়ি শার্টটা গায়ে দিয়ে খুশির টিশার্টে ঘাম মুছে পাশের রুমে চলে গেলো। খুশি বিছানার চাদরটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসে একটা সিগারেট ধরালো।
কিছুক্ষন পরে লোকটি ফিরে আসলো। বিছানার পাশে বসে বললোঃ
-সরি…
–না ঠিক আছে।
-আপনি কি গোসল করবেন? করলে এটাচ বাথরুম আছে গিয়ে গোসল করতে পারেন।
–কাজ শেষ করে নাহয় গোসলটা করতাম। কিন্তু আপনি বললে গোসল সেরে আসতে পারি।
-না ঠিক আছে। আপনি গোসল সেরে কাপড় পড়ে বসার রুমে আসুন আমি অপেক্ষা করছি।
কথাটা বলে লোকটা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
খুশি রুম থেকে বের হবার সময় পাশের রুমে উঁকি দিলো। বিছানার উপর কঙ্কালসাড় এক মহিলা শুয়ে ঘুমাচ্ছে। দেখেই বুঝা যায় অনেকদিন যাবত অসুস্থ্য কোন নারী। কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে যে কেউ বলবে একসময় তিনি অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন ঠিক খুশির মতো।
-এই নিন আপনার টাকা।
–ধন্যবাদ। যদি কিছু মনে না করেন আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
-আমি জানি আপনি কি প্রশ্ন করবেন। হুম পাশের রুমের ওই মহিলা আমার স্ত্রী। গত পনেরো বছর ধরে প্যারালাইসড। একটা হাত নাড়াতে পারে মাত্র। অনেকে বলেছিলো দ্বিতীয় বিয়ে করতে কিন্তু ওর কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। দ্বিতীয় বিয়ে করলে হয়তো ওর প্রতি বিরক্তি সৃষ্টি হতো। ওর সেবা করতে পারতাম না। তাছাড়া ওর জায়গাটা অন্যকাউকে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
খুশি অবাক হয়ে লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটি খুশির দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করলোঃ
-আমি আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার শরীরের একটা চাহিদা আছে যেটা না মেটাতে পারলে হয়তো তার প্রতি চাহিদা না মেটানোর কারনে আমার ক্ষোভ জন্ম নিতে পারে তাই মাঝে মাঝে বাসায় মেয়ে নিয়ে আসি। এভাবে বললাম বলে মনে কষ্ট পাবেন না।
–জ্বী না।
-হুম আমি জানি আমি যা করছি তা অন্যায়। কিন্তু আমার যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি। যতোই পাপ করি আমার স্ত্রীর সেবা করছি। ওকে এখনো ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি। আমার এই কুকর্মের কথা জানতে পারলে হয়তো সে আমাকে ঘৃণা করবে কিন্তু আমার আর কিছুই করার নেই।
বাইরে ভোর হয়ে গেছে। জানালা দিয়ে আলো ঢুকছে। লোকটি বললোঃ
-চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
–না থাক আমি যেতে পারবো। আপনি বরং সকালটা ম্যাডামের পাশে বসুন। আসি।
সকালে ঠান্ডা বাতাস বইছে, কিছু পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। হাঁটতে ভালো লাগছে। খুশি মাঝে মাঝে ভাবে সমাজে কতো মানুষ বাস করে। খারাপ মানুষের মাঝে ভালো আবার ভালো মানুষের মাঝে খারাপ লুকিয়ে থাকে। এদের চেনা বড় মুশকিল।
হুম মানুষ পাপ করে, কারো পাপ চোখে দেখা যায় কারোটা যায়না।
আচ্ছা সমাজ তাকে পতিতা বলে চিহ্নিত করে কিন্তু প্রতিদিন যেই পুরুষগুলোর সাথে সে রাত কাটায় তাদের আলাদা কোন নাম নেই কেন?
খুব কঠিন প্রশ্ন।
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগে কিন্তু উত্তর কারো কাছে নেই। কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকেনা।
খুশি মাঝে মাঝে ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝতে পারেনা। যেমন যার সাথে রাত কাটিয়ে আসলো সে ভালো নাকি খারাপ বুঝতে পারছেনা। একদিকে স্ত্রীকে ভালোবেসে পনেরো বছর ধরে একটা লাশের সেবা করছে অন্যদিকে পরনারীর সঙ্গে মিশে স্ত্রীকে ধোঁকা দিচ্ছে।
সত্যি মানুষ বড়ই অদ্ভুত, এন. আই. আলিফের ভাষায় মানুষ বড়ই আজিব।