মায়ার বাধঁন

ফিরোজ খান নূন

0
1787

 

ফ্রেন্ড লিষ্ট চেক করতে চোখে পড়ল এক সময়ের সচল,প্রানবন্ত,কতো সুখ-দুঃখের লেখার কারুকার্য মেশানো একটি প্রোফাইল ।মনে পড়ে গেলো মিনা আপুর ছোট দু’টি কিউট কন্না সন্তানেরর কথা!!!কি সুন্দর মায়াবী চেহারা,একবার দেখলে চোখ ফেরাতে মন চাই না । কিন্তু হঠাৎ কি যেনো হলো! অনেক দিন হলো আপুর কোনো খোজ পাই না। কিউট দু’টি মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবির স্টাটাস দেখি না। শুনলাম আপু নাকি মারা গেছেন!!! আমি ভাবতেই পারি না কি আজব দুনিয়া। নাটাইয়ের টানে চলে যেতে হয়!!! জানতাম আপুর নাকি প্রত্যেক মাসে কি অজানা রোগের কারণে রক্ত নিতে হতো। প্রায়ই আমার সাথে ফেইসবুকে কথা হতো।। আজ সেই চ্যাট লিষ্ট দেখছি!!!আর ভাবছি এইতো কিছুদিন আগেও পৃথিবীর আলো -বাতাস গ্রহণ করতো,হাসতো,কাদতো,অভিমান করত,খেলতো,মজা করতো। . সময়ে সময়ে নিজের শরীরের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করতো। নাহয় মৃত্যু!!! অভিনয় করেই ছোট ২টি শিশুর কাছে নিজের যন্ত্রণার কথা বলতো না। সত্যিই তো আপুর মায়াবী শিশুদের দেখলে,মায়ার বাঁধনে জড়াতে ইচ্ছে করে, আর আপু তো এই নিষ্পাপ শিশুর মা, কেনই বা বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করবেনা। সবে মাত্র জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে তাদের! যেখানে মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে,যত্ন দিয়ে ঘিরে থাকার কথা তাদের চারপাশ। কিন্ত নিয়তি বড়ই কঠিন,নির্মম,নিষ্ঠুর। কোথায় আজ সেই স্বপ্নময়, সোনা ঘেরা জীবন তাদের?কোথায় আজ হারিয়ে গেলো তাদের প্রিয়জন,প্রিয় আম্মু্!!!কাকে বলবে আম্মু আমাকে ক্ষুধা লাগছে, ভাত খাব? কাকে বলবে আম্মু আজ স্কুলে যাব না,টিচার শুধু বকা দেয়?কাকে বলবে আমি আজ তোমার সাথে ঘুড়তে যাবো?কাকে বলবে আম্মু আমার খুব জ্বর মাথা একটু টিপে দাও? কাকে বলবে আম্মু আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি?কার কপালে আদর করে চুমু দিবে? আম্মু বুঝতে দিতো না তার কষ্টের কথা। বুঝতে দিতো না সে আর বেশিদিন নেই তাদের সাথে।সত্যিই তো মরণব্যাধি নিয়ে কি আর বেশি দিন বাঁচা যায়?…. ক্যান্সার!!! সে তো ব্যাধি নয়!!! মৃত্যুর জম। বেশিদিন থাকলো নাহ, বিদায় নিয়ে চলে গেলো ঐ আপন দেশে। যেখানে যেতে হয় সবাইকে। , শুনলাম রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী আপুর স্বামী নাকি নতুন বউ নিয়ে এসেছে। যেই স্বামী তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।যে স্বামী তাকে ছাড়া একবেলাও মুখে আহার দিতো না। সেই স্বামী, বিপত্নীক হওয়ার ১০ দিন পার হতে না হতেই…… সত্যিই, পৃথিবী কারো জন্য থেমে থাকে না।হয়তো তাই আপুর সাজানো সংসারের নতুন মালিক এসেছে,এভাবে আসবে, আসবে, আসতে… থাকবে…. রচিত হবে নতুন ইতিহাস। পরে থাকবে আপুদের মত সাজানো ছোট সংসারের মায়া জড়ানো,মায়াবী কন্ন্যা শিশুদের হাসি মাখা মুখ,খেলে বেড়ানো উঠান, বাড়ির চারপাশ। অনেক যন্ত্রনা কষ্ট,নিয়ে,হাসি মুখে পার করেছে ১২টি বছরের সংসার।হয়ত পরপারে গিয়েও দেখছেন তার মেয়ে আজও আম্মু বলে চিৎকার করছে তার কবরের পাশে। হয়তো আজ নয়।যখন বুঝতে শিখবে তারা তখন! একদিন ঠিকই কাঁদবে….. চলে যেতে হবে; এমনি করেই।মায়া বড় কঠিন।মায়া নিয়ে বাঁচতে হয়,মায়াই বাঁচিয়ে রাখে।তবুও কেনো মায়ার বাঁধর ছিঁড়ে চলে যেতে হয়? অজানা কেনো এক রাজ্যে,যেখানে থাকেনা মায়াময়তা,ভালবাসার টান।যেখানে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না!!! তাহলে কেনো এই দুনিয়ায় মায়া বাড়িয়ে বেঁচে থাকা??কেনো কেনো কেনো!!!

Facebook Comments