শিশুকে ইংলিশ কার্টুন দেখানো প্রসঙ্গে
– নয়ন তানবীরুল বারী
মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টিকর্তার রঙে রঙিন হয়ে উঠার মতো মর্যাদাবান হওয়াই মানুষের গন্তব্য। মানুষকে যেমন মানুষ হয়ে উঠতে হয় তেমনি মানুষ হিসেবে রয়েছে তার আনুষঙ্গিক নানা কাজ। তাঁকে নানা হক পালন করতে হয়। সৃষ্টিকর্তার হক যেমন রয়েছে পাশাপাশি রয়েছে স্রষ্টার সৃষ্টির হক। এজন্য সার্বিক পরিবেশের জ্ঞান অর্জন ও তার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য নিতে হয় নানা পদক্ষেপ। পরিবেশ বলতে গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ সহ সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ। পরিবেশকে বাসযোগ্য ও উন্নত করলেই একটা প্রক্রিয়ায় সে নিজেই সিস্টেম হয়ে উঠে। বলা হয় সিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে! তাই আসুন সিস্টেমটার পরিপূর্ণ গলদগুলো শুধরানো, লালন ও যত্ন করি।
প্রাণি হিসেবে অনেক বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার লগ্নেই মানুষ হয়ে যায়। কিন্তু মানব শিশুকে মানুষ করতে হয়। চারপাশ থেকে শিখতে শিখতে সে একজন ভোটার হয়ে উঠে। অর্থাৎ নানা বিষয়ে তার একটা ভাবনা গড়ে উঠে। এই চারপাশটাকে তো একাই কেউ বদলাতে পারে না। একা একা মুক্তির কোন সুযোগও নেই। তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদেরকেই এই দায়িত্ব নিতেই হবে।
একটা শিশুর জন্য তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখন আমরা যদি শুরুটা তথা শৈশব ও কৈশোরকালকে সঠিক পথে রাখতে পারি তবে যৌবনকালে সে একজন আলোকিত মানুষ হয়ে সমাজের জন্যই আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।
এজন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে আমাদের।
যেমন ধরুন চারপাশে আজ মুঠোফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি। সঠিকভাবে সেটা ব্যবহার করলে কিন্তু এর সুফলকে বিস্তৃত করা সম্ভব।
প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত গিয়ে একটা শিশুকে মোটামুটিভাবে বাংলা, ইংলিশ ও গণিত সম্পর্কে মোটামুটিভাবে ধারণা দেওয়া হয়। এই পর্যায়ে যদি কোন বিষয় সে দুর্বল থাকে তবে তা অনেক সময় কাটিয়ে উঠা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। ইংলিশ আজকাল এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটা ছাড়া চাকরির কপাল মন্দই শুধু হয় না, এমনকি পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান ও গবেষণা এই ভাষাতে অনূদিত হয়ে আছে।
শিশুদের একটা সময় আমরা কার্টুন দেখানো থামাতে পারি না। যদি কার্টুন না দেখিয়ে বড় করতে চান করুন শুভকামনা রইলো। কিন্তু যদি না পারেন তখন কি?
প্রথমেই আমরা আমাদের সন্তানকে হিন্দি কার্টুন দেখানো হতে বিরত রাখবো। এবং ইংলিশ কার্টুন দেখাবো। তাহলে হবে কী, সে শৈশবকাল হতেই ইংলিশ স্পিকিং ও লিসেনিংটা শিখে ফেলবে। যেহেতু ইংলিশ কার্টুন গুলোর সংস্কৃতি ভিন্ন সংস্কৃতির তাই সে বিশ্বের নানা দেশের কালচার ও সভ্যতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে উঠবে। এমনকি ইংলিশে অনেক ইসলামি কার্টুন রয়েছে, যেসব কার্টুনে প্রাত্যাহিক নীতিনৈতিকতা সমেত শিক্ষা দেওয়া হয়।
হিন্দি কার্টুন এজন্য নিষিদ্ধ করবেন যে, এই কার্টুনে একবার আসক্ত হয়ে গেলে সে আর আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে না। হিন্দি ভাষা আমাদের শিক্ষার কোন বাহন নয়। হিন্দি ভাষা কেবল একটা দেশের ভাষা। হিন্দি ভাষা শিখে কোন চাকরি হয় না। সেই দেশের জীবন ইউরোপ – আমেরিকা – রাশিয়া- অস্ট্রেলিয়ার মতো আমাদের কর্মসংস্থান করে না। হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলা ভাষার জন্য হুমকিস্বরূপ। এরমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে হিন্দির আগ্রাসন বাংলাভাষা ও বাংলাভাষীকে ব্রাত্য করেছে অনেকটাই। এছাড়া হিন্দি সিনেমাগুলো শিল্পের প্রয়োজন ছাড়াই যৌন সুরসুরির আখড়া। একসময় যেসব সিন অশ্লীল মনে হতো আমরা তা এখন সপরিবারে দেখছি। হিন্দি সিনেমাগুলো এখন আরও বেশি হিংসাত্মক, কাটাকাটি ও অপরাধ জগত তথা তথাকথিত আন্ডারওয়ার্ল্ড হয়ে উঠছে। পরিপূর্ণ মস্তক না নিয়ে কেউ যদি এসব দেখে তবে তার অপরাধী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশের নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক দাগী অপরাধ স্বীকার করছে যে, সে এসব হিন্দি সিনেমা, নাটক, ক্রাইম পেট্রোল ইত্যাদি দেখে শিখেছে।
এমনকি এইসব জিনিস প্রচন্ড ইসলামোফোবিক। মুসলিম পরিচয় ও সংস্কৃতিকে নোংরা ভাবে উপস্থাপন হিন্দির অন্যতম প্রধান এজেন্ডা যেন। যা আমাদের পাশাপাশি সৌহার্দ্যপূর্ণ বসবাসকে কঠিন করে তুলবে।
আমরা আমাদের সন্তানদের ইংলিশ, ফ্রেন্স, জার্মান, রুশ, আরবি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে সেই সব দেশে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করবো। বাংলা ও ইংলিশ বাদে আরেকটা ভাষাশিক্ষা আবশ্যিক করে তুলতে হবে। সারা পৃথিবীতে আমাদের সন্তানরা বড় হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করবে। দেশের হয়ে, সমাজের হয়ে, গণমানুষের হয়ে, মজলুমের পক্ষে কাজ করবে।