এক শহরে এক দেহপসারিনী ছিল । সে ছিল অপূর্ব সুন্দরী । ওর রুপ আর সৌন্দর্য অনেককে এমন আকর্ষন করতো যে ওর সঙ্গ -সান্নিধ্য  পাওয়ার জন্য দেশের অনেকে উন্মুখ হয়ে থাকতো । মেয়েটিরও টাকা ছাড়া আর কোন বাছ ,বিচার ছিলনা । কিন্তু তার রুপের ক্রেতাদের কাছে তার একটি শর্ত থাকতো । সেটা হলো ক্রেতারা বিনোদনের সময় তার শুধু ঠোঁট স্পর্শ করতে পারবেনা । ক্রেতারা রাজী হতো কারন ভালবাসা হীন বিনোদনে সামান্য একটি অঙ্গের খুব একটা প্রাধান্য আছে বলে ও মনে করতো না । এমনি করে দিন কেটে যাচ্ছিল । একদিন এক শিল্পী এলো মেয়েটির কাছে । সে টাকার বিনিময়ে মেয়েটির ছবি আঁকতে চাইলো । মেয়েটি রাজী হয়ে গেল । শিল্পী মেয়েটিকে সামনে বসিয়ে ছবি আঁকতো আর মেয়েটির জীবনের কথা শুনতো ।দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগলো । শিল্পীর নিষ্কাম আর নির্লোভ আচরনে মেয়েটি ভালবাসে ফেলে শিল্পীকে । মেয়েটির জীবনের করুন ইতিহাস জেনে শিল্পীও ওকে ভালবেসে ফেলে । কিন্তু ভালবাসলেও শিল্পী থাকে সংযত , নির্বিকার আর নিস্পৃহ । অথচ মেয়েটি….. যে এতদিন পুরুষের সঙ্গকে ঘৃণা করে এসেছে সে কিন্তু প্রচন্ড আকর্ষন বোধ করতে লাগলো তার প্রিয় পুরুষটির প্রতি ।কিন্তু শিল্পীর নিস্পৃহ আচরন দেখে মেয়েটি বললো , তুমি তো আমাকে ভালবাস , তুমি কি আমাকে চাওনা ? শিল্পী বললো, আমি তোমাকে ভালবাসি ,তোমার দেহকে নয় । মেয়েটি বললো , হৃদয় স্পর্শ করতে হলে যে দেহকে বাদ দিয়ে করা যায়না । কারন মানুষ যাকে ভালবাসে তাকেই কাছে পেতে চায়। শিল্পী বললো , পাওয়া মানে তো ভোগ নয়। শিল্পীর ছবি আঁকা শেষ হয়ে গিয়েছিল ।যাওয়ারও সময় হয়ে গিয়েছিল । মেয়েটি জানতো ,শিল্পীকে ধরে রাখার সাধ্য তার নেই । তাই কেঁদে বললো যাও কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে এমন কিছু স্মৃতি চিহ্ন দিয়ে যাও যা নিয়ে আমি সারা জীবন বাঁচবো । মেয়েটি বললো , তুমি আমার ঠোঁটে তোমার প্রেমের চিহ্ন রেখে যাও । শিল্পী অবাক হয়ে বললো কিন্তু তুমি তো এই স্পর্স পছন্দ করোনা তাহলে ? মেয়েটি জবাব দিল , হ্যাঁ এতদিন করিনি । অবচেতন মনে কেন একাজ করেছি জানিনা ।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার প্রিয় পুরুষটির জন্যই যেন আমার এই একান্ত কামনাটুকু আমি সঞ্চয় করে রেখেছিলাম এতদিন ।শিল্পী দুই হাতের অঞ্জলীতে তুলে ধরে মেয়েটির মুখ খুব মমতায় আর সযতনে মেয়েটির ঠোঁটে ওর ঠোঁটের স্পর্শ রাখে । মেয়েটির চোখ থেকে তখন জল ঝরছিল । ও অনুভব করছিল সেই মৃদু অথচ সুরভীত স্পর্শে যেন ওর সারা দেহে শত গোলাপ প্রস্ফুটিত হচ্ছে । এতদিন শত পুরুষের সঙ্গ ওকে যে অনুভবের জন্ম দিতে পারেনি আজ ওর প্রিয় পুরুষের সামান্য স্পর্শ সেই অনুভবের জন্ম দিল । যার জন্য জনম জনম অপেক্ষায় ছিল ওর সমগ্র স্বত্তা । শিল্পীকে ও খুশি মনে বিদায় দিল আর মনে মনে বললো, নাইবা পেলাম তোমায় কিন্তু তোমার এই সামান্য স্পর্শ পরশ পাথরের মত আমাকে শুদ্ধ – পবিত্র করে তুলবে । এরপর মেয়েটি শহর ছেড়ে দুরে নির্জন এক স্হানে একা নিঃসঙ্গ অবস্হায় সন্যাস জীবন যাপন করতে লাগলো । প্রেম এমন এক পরশ পাথর যার স্পর্শে মানুষ পূত – পবিত্র হয়ে ওঠে । মেয়েটিও তারপর থেকে সন্যাসিনীর জীবন যাপনে অভ্যস্হ হয়ে উঠলো ।।

Facebook Comments