করোনাভাইরাস, প্রণোদনা ও ৬০,০০০ শ্রমিক-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ

0
1924

করোনাভাইরাস, প্রণোদনা ও ৬০,০০০ শ্রমিক-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ

বিসিপিএ বা বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের ( উৎসঃ বিসিপিএ, ১০ই ফেব্রুয়ারী-২০১৬ প্রকাশিত) হিসাব অনুযায়ী তাদের সদস্য সংখ্যা দেশী ও বিদেশী মিলে প্রায় ২০৮টির মত, কৃষি কাজে কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী কোম্পানী আছে। এছাড়াও বিসিপিএ-এর সদস্য হননি এরকম আরও প্রায় ৯২টির মত কোম্পানী আছে অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে ৩০০টির মত কোম্পানী আছে বলে ধারণা করা হয়, যার মধ্যে ২০-২৫টি বড়, বাকীগুলো ছোট ছোট কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী কোম্পানী। এই কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী কোম্পানীগুলি তৈরি পোশাক শিল্পের মত রপ্তানিমুখী না হলেও আমাদের দেশের প্রধান ফসল ধান, পাট, ভূট্রা, গম , আলু, বিভিন্ন রকম সবজি ও নানা ধরণের শস্য সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা এদেশের কৃষককুল, সচেতন মহল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি ভাল ভাবে জানেন। শস্য সংরক্ষণের সাথে জড়িত এই ৩০০ কোম্পানীর সাথে প্রায় ৬০,০০০( ষাট হাজারের মত) মহিলা ও পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারী আছে, যাদের অধিকাংশ রিপ্যাকিং, লোডিং, আনলোডিং ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউশনের সাথে জড়িত। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় সব কোম্পানীর উপরোক্ত কার্যক্রমগুলি বন্ধ হয়ে আছে, যদিও কোম্পানীগুলি তাদের সাধ্য মত এখন পর্যন্ত তাদের সবকিছু দেখভাল করছে, কিন্তু আল্লাহ্ না করুক, করোনাভাইরাস যদি খুব বেশী দিন লম্বা হয়, তখন তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে যাবে অর্থাৎ তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতের দিকে চলে যাবে, তখন হয়তো কোম্পানীগুলির কিছুই করার থাকবে না । আমরা জানি, বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। এই খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী,গত বছরের ১৮ মার্চ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ যে আয় করেছিল,তা এই বছরের মার্চে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ বিদেশি ক্রেতা পোশাক নিচ্ছে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিএমইএ সভাপতি সভাপতি ডক্টর রুবানা হক দুদিন আগেই বলছিলেন, প্রতি মিনিটে-ঘণ্টায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এমন দুর্দিন আগে কখনও আসেনি। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা। নভেল করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন বিপর্যস্ত; যার প্রভাবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শূন্যে নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এখাতের উদ্যোক্তারা। যার কারণে গত ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত মোকাবেলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”তিনি বলেন, “ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।” তিনি নিদিষ্ট করে বলেছেন-বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন। আমি বলবো, সত্যি তিনি মহানুভতার পরিচয় দিয়েছেন, কারণ অতি সম্প্রতি একটা জরিপে দেখা গেছে ,( উৎসঃ According to a recent survey conducted by the Centre for Policy Dialogue- CPD) বাংলাদেশের ৩,৫৯৬টি ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৩৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে,তাদের মধ্যে ৬০.৮% ভাগ মহিলা এবং ৩৯.২% পুরুষ।তাই আমি মনে করি, গরীব শ্রমিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনার প্যাকেজ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও প্রশংসার দাবী রাখে। ফিরে আসি কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী কোম্পানীগুলির সাথে জড়িত প্রায় ৬০,০০০( ষাট হাজারের মত) মহিলা ও পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারীর কথায়, এদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, আমাদের সংগঠন, বিসিপিএ বা বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের ভূমিকা কী? উনারা এইসব মহিলা ও পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারীর নিয়ে কী ভাবছেন ? আমরা কি একটু বিজিএমইএর মত শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবো না? আমরা কি পারিনা জনদরদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রণোদনার বিষয়টি একটু তুলে ধরতে। এই প্রশ্ন থাকলো আমাদের সংগঠন বিসিপিএ বা বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারীর কাছে।

লেখকঃ
কৃষিবিদ মোঃ আববাস আলী
পরিচালকঃ এক্সপ্লোর বিজনেস লিমিটেড।

Facebook Comments