একসময়ের লাল-সাদা শাপলায় ভরপুর দৃষ্টিনন্দন বিলটি অবৈধ দখলদারদের দাপটে হারিয়ে ফেলেছিল সৌন্দর্য। স্থানে স্থানে বাঁশের বেড়া, কচুরিপানা দিয়ে বিলটি ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। তাই বিল পরিষ্কার ও দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য সপ্তাহজুড়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন তিনি। অথচ যেভাবে চাইছিলেন, কাজটি সেভাবে হচ্ছিল না। অগত্যা নিজেই নেমে পড়লেন বিলে। টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা বিলের কাদাপানিতে নেমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান পরিষ্কার করলেন কচুরিপানা, উচ্ছেদ করলেন অবৈধ স্থাপনা।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে এই অভিযান চালানো হয়। প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বিলের কচুরিপানা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
ইউএনওকে বিলে নামতে দেখে বসে থাকতে পারেননি স্থানীয় জনসাধারণসহ রাজনৈতিক নেতারাও। তাঁরাও যোগ দেন পরিষ্কারের কাজে।
মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানান, ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে আশুরা বিল। এখানে দেশীয় মাছ লাল খলশে, কাকিলাসহ আট প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
অভিযানে অংশ নেওয়া নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে জানান, একজন ইউএনও বিলের কাদাপানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করবেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন, তা ভাবনাতেও ছিল না। ইউএনও নিজে বিলে নামার পর তিনিও পানিতে নেমে কচুরিপানা পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী বিলটি একসময় উত্তরাঞ্চলের ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ছিল। দখলদারদের কারণে বিলটির ঐতিহ্য হারিয়েছে। এটি রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় লোকজনের ছিল। ইউএনও মশিউর রহমানের ব্যতিক্রমী অভিযান তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ বিলটি দেশের অমূল্য সম্পদ। একসময় এ বিলজুড়ে ফুটে থাকত লাল-সাদা শাপলা। শীতে অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত থাকত। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে একদল প্রভাবশালী মানুষ বিলটি দখলে নিয়েছিল। বিলটিকে বাঁশের বেড়া, মাচা দিয়ে অসংখ্য ভাগে ভাগ করেছিল। এতে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল পুরো বিল। হারিয়ে গেছে শাপলা। শীতকালে ধান চাষ করায় ফসলে কীটনাশক ব্যবহারে হারিয়ে গেছে বহু দেশি প্রজাতির মাছ। বন্ধ হয়েছে অতিথি পাখি আসা।
ইউএনও বলেন, আজ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে লাগানো হচ্ছে শাপলা, পদ্ম। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিলটির হারানো ঐতিহ্য।