বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন, যার হাতে পুরো বাংলাদেশেরই ইন্টারনেট ব্যবস্থা, শেষ পর্যন্ত তাদেরই সাইট হ্যাক করা হয়েছে “হ্যাকড বাই এইচ,এস,সি ব্যাচ ২০১৮” শিরোনামে। সেখানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বরাবর ক্ষোভ জানিয়ে দীর্ঘ একটি চিঠি লেখা হয়েছে। তবে তথ্যের কোন পরিবর্তন করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে। কিভাবে ওয়েবসাইট ঠিক করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে।
চিঠিটি হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ
” শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রী,
কেমন আছেন? এইচএসসি ২০১৮ ব্যাচ কে খেলে দিয়ে আশা করি ভালোই আছেন । আপনি জেনে খুশি হবেন যে, এইচএসসি ২০১৮ ব্যাচ এবার এক ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছে। এতদিন আপনার ইশারায় মানুষ জিপিএ ৫ এর খেলা দেখেছে আর এবার সেই আপনারই ইশারায় দেখবে ফেইলের খেলা। আপনি জেনে খুশি হবেন যে এবার আর পাঁচটা বছরের মতো মিষ্টির দোকানে ভিড় হবেনা; হবে কাফনের কাপড় বিক্রির দোকানে। আচ্ছা বলতে পারেন কি দোষ করেছিলাম আমরা? প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে না পারা টা ছিলো আপনার ব্যর্থতা; আমাদের নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের জন্য ৩০ মিনিট আগে হলে পৌঁছানোর নিয়ম করলেন, মানলাম সেটা (এর জন্য ২ মিনিট দেরীর কারণে আমার এক ভাই বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করতে পারেনি) যাক নিয়ম খুব কড়াকড়ি ছিলো সে জন্য সাধুবাধ নাহয় জানালাম। আচ্ছা যে রুটিন বানিয়েছিলেন সেটা কি মানসম্মত ছিলো? গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আগে ১ দিন বন্ধ দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? ১ দিনে বই একবার রিডিং পরে অর্ধেক ও তো শেষ করতে পারিনা। নাকি আমাদের রোবট ভাবছেন? তার উপর এমন সব এমসিকিউ ও সৃজনশীল যা দেখে ক্লাসের টপার রাও কতক্ষণ হতভম্বের মতো বসে থাকে। পরীক্ষা শেষে যখন বাবা-মা বলে “পরীক্ষা কেমন হয়েছে? সব এন্সার করছো তো?” বিশ্বাস করেন্ন চোখের পানি ধরে রাখতে খুব কষ্ট হয়। কি জবাব দিবো তাদের? ICT-র মতো একটা সাবজেক্টে যেখানে অনেকেই ভাবত যে,যত কঠিন প্রশ্নই হোক না কেনো ৯০+ হবেই । সেখানেই অনেকেই ধসে পড়ছে। শত শত শিক্ষার্থী ICT তে ফেইল করার স্বপ্ন দেখছে; এ স্বপ্ন কেউ দেখতে চায়না তবে আপনারা দেখতে বাধ্য করছেন। সেই সাথে বাধ্য করছেন আত্মহত্যা করার স্বপ্ন দেখতেও।
যে অধ্যায় গুলো ছাড়া “পদার্থ ২য় পত্র” বইটা কল্পনা করা যায় না সেই অধ্যায় গুলো থেকে কোনো সৃজনশীল হয়নি। বাহ! যে বা যারা এই প্রশ্নটা করছে তাদের হয়তো বইটা সম্পর্কে কোনো ধারনাই নেই। আচ্ছা তাদেরকি আদৌ যোগ্যতা আছে প্রশ্ন তৈরী করার নাকি তারা চাচা,মামার জোড়ে প্রশ্ন করতেছে?
যে ছেলে/মেয়েটি বুয়েটের প্রিপারেশন নেয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলো সে এখনই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আমি ভালো ছাত্র না, কিন্তু দেশের ৮০% ছাত্রই কি ভালো না? শতভাগ ছাত্ররাই এবার প্রশ্নের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। একটা পাগলামি মার্কা শিক্ষাব্যবস্থা প্রান নিয়ে নিচ্ছে #সেফা সৈকত , #মল্লিকাদের মতো শিক্ষার্থীদের। আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে অধিকাংশ শিক্ষারথীই আত্মহনন এর পথ বেছে নিতো। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এর দায়ভার নিতে পারবেন তো? ফিরিয়ে দিতে পারবেন সন্তানগুলোকে তাদের মায়ের কোলে?
আচ্ছা ছাত্রছাত্রীরা তো সারা বছর ফাকিবাজি করে তাহলে অন্তত প্রতি কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে জরিপ করেন যে এবারের প্রশ্ন কতটুকু মানসম্মত হয়েছে। এইসব সাইট হ্যাক করার একটাই কারণ আপনার চোখে যাতে একবারও অন্তত পড়ে। আমাকে গোয়েন্দা দিয়ে ধরিয়ে গুম করে ফেলার চিন্তা ভাবনা করলেও করতে পারেন, অনন্তত রেজাল্টের সময় আত্মহত্যার পাপ টা হবেনা। তাহলে প্রতিবেশীরা অন্তত জানতে চাইবে না আমার বাবা-মার কাছে যে আমার রেজাল্ট কি আসছে। সবচেয়ে বাজে রুটিন, সবচেয়ে বাজে প্রশ্ন, সবচেয়ে বাজে গার্ড, সবচেয়ে বাজে ব্যবহার, সব চেয়ে বাজে ম্যান্টাল্লি টর্চার= ২০১৮ এইচ এস সি ব্যাচ। কিন্তু রেজাল্ট এর সময় কেও এই গুলা মনেই রাখবে না। দোষ হবে একটাই কেনো রেজাল্ট খারাপ হলো? তাদের বলা হবে তারা লেখা পড়া করে নাই, অন্যরা পারলে তারা কেন পারে নাই।। কিন্তু কেও তাদের অবস্থা টা বুঝবে না।। একদম লেখাপড়া না করে কেওই পরীক্ষার হলে যায় না।। কিন্তু ভাগ্য বলেও তো একটা কথা আছে। ভাগ্য খারাপ ২০১৮ সালের এইচএসসি ব্যাচের। আর দুর্ভাগ্য বশত আমরাই #ব্যাচ_১৮ এর শিক্ষার্থী
পরিশেষে একটি কথাই বলব বাঁচতে দিন নতুন প্রজন্ম কে। উদ্ভট মানহীন সব প্রশ্ন এই বোর্ড পরীক্ষায় করে আর কত ছাত্র-ছাত্রীর জীবন কেড়ে নিবেন? ক্লাসের টপারদের নাহয় মধ্যম রেজাল্ট হবে বা ভালো ফলাফল হবে কিন্তু আমার মতো মধ্যম ও নিম্ন মানের ছাত্র/ছাত্রীরা তো নিয়মিত এমসিকিউ দেয়ার পরে ফেল করার স্বপ্ন দেখছে। ধন্যবাদ দেশের জনসংখ্যা কমিয়ে আনার সুন্দর ও অদ্ভুত এক উদ্ভাবন এর জন্য। পারলে নোবেল টা এবার আমিই দিতাম আপনাকে এই অসাধারণ চিন্তার জন্য। আর হ্যাঁ, চাইলে আপনার বন্ধু মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কে বলবেন কাফনের কাপড়ে শিঘ্রই ভ্যাট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে এতে করে সরকার এবার বেশ ভালোই আয় করতে পারবে।
#আমি বুয়েটের প্রশ্ন দেখিনি তবে ২০১৮ এর পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের প্রশ্ন দেখেছি
#আমরা মেডিকেলে পরীক্ষা দেইনি তবে আমরা ২০১৮ তে জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের এমসিকিউ প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছি।
#উচ্চতর গণিত ২য় পত্রে এত বাজে প্রিন্টিং জীবনে প্রথম দেখলাম। একই অঙ্ক ২ বার করার ফলে যে সময় নষ্ট হয়েছে সেটার ক্ষতিপূরণ কে দিবে?
#আর কত ছাত্র/ছাত্রী আত্মহত্যা করলে এই নোংরা খেলা বন্ধ করবেন?
#ভুলে যাবেন না আমরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ
#আমরাই বাংলাদেশ
#আমরাই এইচএসসি ব্যাচ ২০১৮
#Don’t Play With Our Future
দুঃখিত হ্যাক করে ডিফেস করার জন্য তবে কি আর করার আমরা অসহায় আমাদের কথা শোনার কারো সময় নেই। আমাদের সমস্যা নিয়ে নিউজ মিডিয়ায় কোনো সংবাদ হয়না, হয়না কোনো টক-শো। তাই কর্তৃপক্ষের নজড়ে আনতে এটি করতে বাধ্য হয়েছি। ( ইন্ডেক্স পেজ আপডেট করে নিলেই হবে এর বাহিরে কোনো কিছু এডিট/ মোডিফাই করা হয়নি। )”