দুই ভাই বসন্ত কুমার রায় ও তরুণ কুমার রায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নিজ শহর দিনাজপুরে ফিরে এসেছিলেন বসন্ত কুমার রায়। শুরু করেছিলেন চিকিৎসাসেবা। সে অর্ধশতক আগের কথা। তখন ভিজিট নিতেন ১ টাকা। বসন্ত কুমার রায় এখন রোগী দেখেন মাত্র ৪০ টাকায়। আবার অনেকে সেবা পান বিনা পয়সায়। তাঁরই পথ অনুসরণ করেছেন ছোট ভাই তরুণ কুমার রায়। তিনিও ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছেন দিনাজপুরে। পড়ুন দুই ভাইয়ের কথা।

দিনাজপুর শহরের কালিতলা এলাকায় স্থানীয় প্রেসক্লাব। সেখান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে চলে যাওয়া গলি ধরে ৫০ গজ এগোতেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়ে একটি সাইনবোর্ড। লোহার ফটকের পাশে বাঁশের খুঁটিতে ঝোলানো সে বোর্ডে লেখা পাঁচজন চিকিৎসকের নাম—বসন্ত কুমার রায়, তরুণ কুমার রায়, সুস্মিতা রায়, সুদীপ্তা রায় ও উদয় শংকর রায়।
একসঙ্গে পাঁচজন চিকিৎসকের নাম দেখে মনে হতে পারে বাড়িটি কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক। কিন্তু তা নয়। এই চিকিৎসকেরা একই পরিবারের সদস্য। বাড়ির নিচতলায় একটি চেম্বার আছে। সেখানে বসেন বসন্ত কুমার রায়। সদা ভিড় লেগে থাকে রোগীদের। যে দৃশ্য ৫০ বছর ধরে একই রকম।
বসন্ত কুমার রোগী দেখা শুরু করেছিলেন ১ টাকায়। এখন দেখছেন ৪০ টাকা ভিজিটে। ‘তবু তা নির্ধারিত নয়’—বললেন, বসন্ত কুমার রায়। মানবসেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলা এই ডাক্তার গেল ১১ মার্চ পূর্ণ করলেন তাঁর চিকিৎসাসেবার ৫১ বছর।

বসন্ত কুমার রায়ের পথ অনুসরণ করেছেন তাঁর ছোট ভাই তরুণ কুমার রায়। তিনিও ৪০ টাকা ফি নিয়ে রোগী দেখেন। ২০ ফেব্রুয়ারি এমন অনেক কিছুই জানা হয়েছিলো বসন্ত কুমার রায়ের কাছ থেকে। যেমন জানা গেল, সাইনবোর্ডে লেখা বাকিদের পরিচয়—তরুণ কুমার রায় তাঁর ছোট ভাই। সুস্মিতা রায় ও সুদীপ্তা রায় বসন্ত কুমার রায়ের দুই মেয়ে। উদয় শংকর জামাতা, সুস্মিতার স্বামী। সুস্মিতা ও উদয় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। সুদীপ্তা রায় আছেন রাজশাহী শহরের একটি হাসপাতালে।
তাঁদের দুই ভাইয়ের খুব স্বল্প ফিতে রোগী দেখার বিষয়টি দিনাজপুরের সবাই জানেন। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন দুই ভাই।
সবার উদ্দেশ্য ধন সম্পদ অর্জনই নয় বরং মানব প্রেম জাগ্রত করে মানুষের জন্য কিছু করা। এমন মানুষের জন্ম হোক দেশের প্রতিটি জেলায়,উপজেলায়,ইউনিয়নে।